পুরী শহরেতে অর্জুন মিশ্র নামে এক পাণ্ডা ছিলেন । তিনি প্রতিদিন সম্পূর্ণ গীতা পাঠ করতেন, তাই লোকে তাকে গীতাপাণ্ডা বলেও ডাকতো । তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন নির্বাহ করতেন ।
একবার পুরীতে টানা সাতদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়, যার ফলে গীতাপাণ্ডা ভিক্ষার জন্য বাইরে বের হতে পারলেন না। কিন্তু তিনি মনে মনে খুব খুশি হলেন, এই ভেবে যে, আজ সারাদিন গীতা পাঠ করতে পারব।
এইদিকে তার গৃহের খাবার সব শেষ হয়ে গিয়েছে।
তখন তার স্ত্রী এসে বললেন, “তুমি যদি সারাদিন গীতাপাঠ কর, আর বাইরে গিয়ে ভিক্ষা না করো, তাহলে আমাদের সংসার চলবে কি করে? আমাদের তিনটি সন্তান সবাই অভুক্ত।”
গীতাপাণ্ডা বললেন,- “ভগবান শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বলেছেন, তিনিই ভক্তের সমস্ত ভার গ্রহণ করেন। আমরা যদি সম্পূর্ণভাবে তার উপর নির্ভর করি তাহলে তিনি অবশ্যই দেখবেন। “
গীতাপাণ্ডা তাঁর স্ত্রীকে গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২২ নম্বর শ্লোকটি দেখালেন।
তাঁর স্ত্রী আরো ক্রোধান্বিত হয়ে হাত থেকে গীতাটি নিয়ে, ঐ শ্লোকের উপড় তিনটি লাইন কেটে দিলেন আর বললেন “আমরা যদি কর্ম না করি তাহলে কি ভগবান খাবার ঘরে এনে দিয়ে যাবে।”
তারপর ক্ষুধা কাতর হয়ে গীতা পাণ্ডার সন্তানরা ও তার স্ত্রী নিদ্রা গেল।
কিছুক্ষণ পর গীতাপাণ্ডাও ঘুমিয়ে পড়লেন ।
গভীর রাতে গীতা পাণ্ডার স্ত্রী ঘরের দরজায় শব্দ শুনতে পেলেন। দরজা খুলে দেখেন, দুটি ছেলে – একটি কালো বর্ণের, আরেকটি দুগ্ধধবল।ছেলে দুটি বলল, -“গীতা পাণ্ডার এক মিত্র এই খাবার সামগ্রী পাঠিয়েছে কৃপা করে গ্রহন করুন ।”
খাবার সামগ্রীতে ঘর ভরে গেল।
ছেলে দুটির প্রতি গীতাপাণ্ডার স্ত্রীর খুব মায়া হল । তিনি তাদেরকে বললেন, “তোমরা, আমাদের সাথে প্রসাদ খেয়ো।”
তখন কালো বর্ণের ছেলেটি বলল- “হ্যাঁ, আমাদেরও খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সাথে প্রসাদ খাবার কিন্তু আমার জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে।”
তারপর ছেলে দুটো চলে গেলো।
গীতাপাণ্ডার স্ত্রী তার স্বামীকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সব বললেন, গীতাপাণ্ডা বুঝতে পারলেন, ঐ কালো বর্ণের ছেলেটি আর কেহ নয়, – স্বয়ং জগন্নাথ, যিনি অভিন্ন কৃষ্ণ, আর সাদা বর্ণের ছেলেটি বলদেব।
গীতা যেহেতু ভগবানের মুখ নিঃসৃত বানী। তাই গীতাতে দাগ কেটে দেওয়ায় সেটা ভগবানের জিহ্বাতে পরেছে।
গীতাপাণ্ডা ও তার স্ত্রী ভগবানের কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং তৎক্ষনাৎ জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে দেখেন জগন্নাথের অধরে তিনটি দাগ।।