ভগবান বুদ্ধ এবংআগন্তুক

রাজগৃহে অধিষ্ঠান করছিলেন ভগবান বুদ্ধ। একদিন এক আগন্তুক এলেন বুদ্ধের কাছে। প্রণাম করে প্রশ্ন করলেন, হে প্রভু, একটি জিজ্ঞাস্য আছে। যদি অনুমতি করেন তো প্রকাশ করি!
বুদ্ধ স্মিত হেসে বললেন, বলো, তোমার যা জিজ্ঞাস্য আছে।
আগন্তুক বললেন, প্রভু, আপনি কখনোই উগ্র হয়ে যান না। ক্ষিপ্ত হয়ে কাউকে কোনোদিন কটু বাক্য অবধি বলেন নি। এমনকি যখন কেউ আপনাকে উত্যক্ত করার মতো মারাত্মক ভুল করে, তাকেও আপনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন। এই নম্র, শান্ত স্বভাব কিভাবে আপনি রপ্ত করেছেন যদি অনুগ্রহ করে বলেন!

বুদ্ধ সবটুকু মন দিয়ে শুনলেন এবং শেষে আগন্তুককে কাছে ডেকে বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি আর সাত দিন পরেই তুমি মারা যাবে। তাই এইসব জিজ্ঞাসা ছেড়ে শেষ কটা দিন, নিজের পরিবার, পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাও।

বুদ্ধের মুখে এই কথা শুনে আগন্তুক স্তম্ভিত হয়ে গেল। বিষণ্ন মনে বুদ্ধকে প্রণাম করে সেখান থেকে বিদায় নিল। পরের সাত দিন সে ভীষণ নীচু স্বরে, নম্রভাবে, সবার সঙ্গে শেষ দেখা সারলো এবং জেনে, না জেনে বিভিন্ন ভুলের জন্য সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিল।

৭ দিন পর আগন্তুক আবার রাজগৃহে এসে ভগবান বুদ্ধের পায়ে প্রণাম করে বললেন, হে প্রভু! আমার এই জীবনের আজ শেষ দিন। আপনার দর্শন এবং আশীর্বাদে জীবন শেষ হবে এই আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।

বুদ্ধ হেসে বললেন, বিগত সাত দিনে তোমার আচরণ কেমন ছিল?

আগন্তুক বললেন, ভীষণ শান্ত এবং নম্র। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছি আমি একটু একটু করে শেষের দিকে যাচ্ছি। তাই রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, অভিমান করে এই অবশিষ্ট সামান্য সময়টুকু অপচয় করতে চাই নি। যার সঙ্গেই মিশেছি, নম্রভাবে, শান্তভাবে কথা বলেছি।

বুদ্ধ বললেন, তুমি বোধহয় তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো। আমি তোমায় সরাসরি উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু তাহলে তুমি শুধু শুনতে, উপলব্ধি করতে পারতে না। এই জগতে আমরা সবাই ক্রমশ ফুরিয়ে আসছি। কেউ জানে না কবে সে থেমে যাবে। তাই যতটুকু সময় বেঁচে আছি, ভালোবাসা, শান্তি, আর ক্রোধহীনভাবে থাকাই বাঞ্ছনীয়। আর হ্যাঁ, তুমি যাতে নিজে তা উপলব্ধি করো সেই কারণে তোমায় বলেছিলাম তুমি সাত দিন পরেই মারা যাবে। তুমি মারা যাচ্ছো না। নিশ্চিন্ত থাকো।

ছলছল চোখে আগন্তুক বললেন, প্রভু, ধন্য ! আপনি আমার চোখ খুলে দিলেন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *